বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নোয়াখালী তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষতি করেছেন। বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে এমন মন্তব্য করেছেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. একরামুল করিম চৌধুরী।
ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনি নোয়াখালী তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষতি করেছেন, যে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হবে আওয়ামী লীগের। আপনি কেন বুঝতে পারছেন না, নেত্রী আপনাকে অনেক জায়গায় চুপ থাকতে বলেছেন। সুবিধাবাদী কিছু লোক ছাড়া অধিকাংশ লোকের কাছে আপনি ঘৃণিত।”
লাইভে এসে এই সংসদ সদস্য বলেন, “আমার ছোটকালের বন্ধু নোয়াখালী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি পিন্টুকে টেলিফোনে আমি আজ অনেক আজে-বাজে কথা বলেছি। এ কারণে আমার স্ত্রী আমাকে ভয়েস এসএমএস পাঠিয়েছে। আমাকে বলেছে, তোমার চেহারা দেখার চেয়ে তোমার মৃত্যুর চেহারাটা দেখাই ভালো। এতে আমি খুবই ব্যথিত হয়েছি।”
তিনি বলেন, “নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সুবর্নচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম জালিমের চেয়েও খারাপ। বিগত ২০ বছর ধরে তিনি চরবাটায় দুঃশাসন করেছেন।”
খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীকে এবং ওবায়দুল কাদেরকে ভুল বুঝিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটা (আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক) বন্ধ করা আমার জন্য মিনিটের ব্যাপার ছিল। কিন্তু আমি তা করিনি। ওবায়দুল কাদের সাহেব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার সুবিধার জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবের বিরুদ্ধে ভোট করেছিলাম। প্রচুর ভোট পেয়েছিলাম। নেত্রী আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে দলে টেনে নিয়েছেন। ২০০৮ সালে এসে আমাকে আবার সদর আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন। সে নির্বাচনে মালেক উকিল সাহেবের পরিবার মেজর মান্নানের ভোট করেছিলেন।”
ওবায়দুল কাদের নিজের ছোট ভাই কাদের মির্জাকে তার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য লেলিয়ে দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য। কাদের মির্জাকে প্রশ্ন করে একরাম বলেন, “আপনি যে আজ সাধু সাজেন, আপনি আমার কাছ থেকে কত কোটি টাকা নিয়েছেন? কোম্পানিগঞ্জের মানুষ সারাজীবন আপনাকে ঘৃণা করবে।”
কাদের মির্জার উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, “আপনাকে রাজাকার পরিবারের ছেলে বলেছি, এ কারণে আপনার ভাই আমাকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বাদ দিয়েছেন। আপনি নিজেই তো লাইভে এসে বলেছেন, আপনার বাবা, আপনার চাচা রাজাকার ছিলেন। হিন্দুদের বাড়ি থেকে বড় বড় মোটাতাজা গরু জোর করে নিয়ে আসতেন। আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।”
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিনের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, “এমপি হওয়া এত সোজা জিনিস না। আপনার চাচা বঙ্গবন্ধুকে ফেরাউনের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।”
বিভিন্ন খাত থেকে পারসেন্টেজ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, “পারসেন্টেজ নিয়েছি। আপনারই আমাকে এগুলো এনে দিয়েছেন, চাকরির জন্য তদবির করেছেন। আমি আমার ব্যবসায়িক টাকা দিয়ে রাজনীতি করি। আমি অনেক কষ্ট করে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস করেছি। আজকে আওয়ামী লীগের অফিস থেকে আমার ছবি ফেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি ইচ্ছে করলেই আপনাদেরকে আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকতে নাও দিতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করিনি। ছবি ফেলে দিয়ে কী হবে? মানুষের হৃদয় থেকে তো মুছতে পারবেন না।”
ওবায়দুল কাদের তা ছোট ভাই কাদের মির্জাকে নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গে একরামুল বলেন, “ওবায়দুল কাদের সাহেব, আমি আপনাকে ঘৃণা জানাই। আপনি বিচার করতে জানেন না। যে ভাই আপনার নিজের স্ত্রী সম্পর্কে কটূক্তি করেন তার বিচার করতে জানেন না।”
তিনি আরও বলেন, “ওবায়দুল কাদের ভাই, আপনি কন্ট্রোল করতে না পারলে আমাকে একটা দিনের জন্য দেন। আপনার ভাইকে আমি ওই পিচঢালা রাস্তার মধ্যে ছেঁচাই ছেঁচাই আনব। আপনার কারণে আমাদের অনেকের মুখ বন্ধ। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার কাছে চার–পাঁচবার খবর পাঠিয়েছেন কোনো কথা না বলার জন্য। আজকে বলছি, আজ আমার অপারেশন।”