রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে ভারত ‘ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান’ বজায় রাখায় ধন্যবাদ জানিয়েছে মস্কো। বুধবার (২ মার্চ) নয়াদিল্লিতে রুশ রাষ্ট্রদূত ডেনিস আলিপভ বলেছেন, ভারত এই সংকটের গভীরতা বুঝতে পেরেছে। তিনি বলেন, ভারত আমাদের কৌশলগত অংশীদার। জাতিসংঘে ভারতের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। ভারত এই সংকটের গভীরতা বুঝতে পারে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের প্রতিবাদে একটি নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল ভারত। এ সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে সেদিন জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত টিএস ত্রিমূর্তি বলেছিলেন, নয়াদিল্লি বিশ্বাস করে, মতপার্থক্য ও বিরোধ নিষ্পত্তির একমাত্র উপায় সংলাপ।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পরপরই পুতিনের কাছে ফোন করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনিও উভয় পক্ষকে আলোচনা-সমঝোতার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানান।
তাছাড়া, রুশ আগ্রাসনের মুখে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা। এক টুইটে এ তথ্য জানিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে মাত্রই ফোন পেলাম। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছেন। আমি জোর দিয়ে বলেছি, ভারত কূটনীতি ও সংলাপের পক্ষে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে ভারতের এমন ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানের কারণ কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
ভারত-রাশিয়ার পুরোনো বন্ধন
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সুসম্পর্ক কয়েক দশকের পুরোনো। বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ এশীয় দেশটিতে রুশ অস্ত্র রপ্তানিসহ অন্যান্য খাতে ব্যাপক সহযোগিতাই এর বড় কারণ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্যমতে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে রাশিয়ার মোট অস্ত্র রপ্তানির আনুমানিক ২৩ শতাংশ গিয়েছিল ভারতে। একই সময়ে ভারতের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ছিল মোট অস্ত্র আমদানির অন্তত ৪৯ শতাংশ।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে পুতিনের নয়াদিল্লি সফরের পরপরই ভারত সরকার জানায়, তারা রাশিয়ার অত্যাধুনিক এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পেতে শুরু করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভারতের এস-৪০০ পেতে কোনো সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে রাশিয়াও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিন্দা প্রস্তাবে ভারতের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার কারণ সম্ভবত রুশ অস্ত্র আমদানি এবং যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন সম্পর্কিত দ্বন্দ্ব ইস্যুতে নয়াদিল্লির প্রায় একই ধরনের অবস্থান।
সূত্র: তাস, এনডিটিভি, আল জাজিরা